# ৩০ ও ২৪ নম্বর পেলেই মিলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
# এ পদ্ধতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা
# এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক-কর্মকর্তারা
# এই পদ্ধতি জুলাই আন্দোলনের ফলাফলের পরিপন্থি বলে দাবি শিক্ষার্থীদের
আবির হোসেন, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পরীক্ষায় ন্যূনতম পাশ মার্ক ৩০ নম্বর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডি ইউনিটের পরীক্ষায় ২৪ নম্বর পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ মিলছে। ন্যূনতম এই পাশ মার্ক অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে আবেদন যোগ্যতা মাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটার ভিত্তিতে এই নিয়ম রাখা হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বদ্যিালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) আব্দুল মজিদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক শ্রেণীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যারা ভর্তি পরীক্ষায় নূন্যতম পাস মার্ক পেয়েছে তাদের আগামী ০৯ অক্টেবর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসকের অফিস কক্ষে (প্রশাসন ভবনের নীচ তলায়) স্বশরীরে পোষ্যের প্রত্যয়নপত্র এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদসহ উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ন্যূনতম ৩০ নম্বর পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ মিলছে পোষ্য কোটাধারীদের। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডি ইউনিটের পরীক্ষায় ন্যূনতম পাশ মার্ক ২৪ নম্বর রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের পোষ্য কোটায় ভর্তি বিষয়ে বিশেষ সুযোগ দিয়ে আসছিল। তবে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটায় ভর্তির কোনো বিশেষ সুযোগই রাখা হয়নি। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা সাবেক উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি ও অনেক দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করেছেন। এ বিপরীতে এ পদ্ধতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছেন। এমনকি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকেও পোষ্য কোটার বিষয়টি বিবেচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে পাশ মার্ক ৩০ ও ২৪ নম্বর রাখা হয়েছে।
এমন নিয়মকে মেধার অবহেলা ও বৈষম্যমূলক আচরণ আখ্যা দিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ পদ্ধতি ২৪ এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফলাফলের পরিপন্থি বলে দাবি করেছেন তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি, যে শিক্ষার্থী শুধু ৩০ মার্ক পেয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা রাখে সেও অন্য এক শিক্ষার্থীর মতো তার জীবনে সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। সে কিন্তু শারীরিক বা পারিবারিক দিক থেকে কোনভাবে পিছিয়ে নেই। এমনকি যে পরিবারে একজন চাকরি করে, সেই পরিবার এমনিতেই স্বাবলম্বী। তাহলে কিভাবে তাকে অনগ্রসর বলব? সে শুধুমাত্র কিভাবে পৌষ্য কোটার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা রাখে? তাহলে পোষ্য কোটার অর্থ পোষ্য হলেই সাত খুন মাফ, পাশ হলেই তারা পৈতৃক সম্পত্তির মতো ভর্তি হওয়ার অধিকার রাখে। কেন তাদের এত সুবিধা দিতে হবে?
শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা চালু হয়েছিল সমাজের বিভিন্ন অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য। অথচ কোটাকে এমন এমন জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে গরিব, মেধাবী, সৎ ও যোগ্য শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও যোগ্যতাকে মূল্যহীন প্রমাণ করা হচ্ছে। আর যদি এই সুবিধা রাখতে হয়, তাহলে গবির, দিনমজুর ও শ্রমিকসহ সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সন্তানদের জন্য রাখা হোক। তা না হলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে পোষ্য কোটার অবসান চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, এমন নিয়মের ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এবং যোগ্যরা ভর্তির সুযোগ হারাচ্ছেন। আমাদের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ছিল সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এমন পদ্ধতি চরম বৈষম্যমূলক। অনেক আগ থেকে বিশ^বিদ্যালয়ে এমন বৈষম্যমূলক নিয়ম চলে আসছে; যা কোনভাবে কাম্য নয়। আমরা অনতিবিলম্বে এমন নীতির অবসান চাচ্ছি। পাশাপাশি সকল শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা ব্যবস্থার করার দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও কর্মকর্তা সমিতির নেতারা এড়িয়ে গেছেন। তারা বিষয়টিকে প্রশাসনের একান্ত নিজস্ব সিদ্ধান্ত বলছেন। ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড.আনোয়ার হোসেন বলেন, এই বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করা ঠিক নয়। এটি একান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ভর্তি পরীক্ষা কমিটির নিজস্ব বিষয়। প্রশাসন কি করবে সেটা প্রশাসন বুঝবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি টিপু সুলতান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। বিশ্বদ্যিালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) আব্দুল মজিদ বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের ক্যান্ডিডেট আছে তাদের থেকে নম্বর আরও কমানোর একটা দাবি আছে। তবে বিষয়টি এখনও আলোচনার মধ্যে রয়েছে। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।