মিম তাঁর কাপড় চোপড় ব্যাগ এ ভর্তি করছে। সে আমার সাথে আর থাকবেনা। বাপের বাড়ি চলে যাবে।
এরকম মাঝে মধ্যেই করে সে। একটু ঝগড়া হলেই বাপের বাড়ির দিকে দৌড় মারে। অনেক রাগী আর অভিমানী একটা মেয়ে। তবে কখনোই যায়নি।
মোল্লার দৌড় যেমন মসজিদ পর্যন্ত। তেমনি মিমির দৌড় দরজার চৌকাঠ পর্যন্ত। তবে আজ মনে হচ্ছে দরজার চৌকাঠ পাড় হবে। আসলে মেয়েটা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। কখনো কোনো কিছু উপহার দিতে পারিনা। যা বেতন পাই তা সংসারের খঁরচ করতেই চলে যায়। এইতো সেদিন পাগলীটার জন্মদিন গেলো। একটা শাড়ি পর্যন্ত তাকে দিতে পারিনি। তবুও সে কখনো কোনো অভিযোগ করেনি।
ঝগড়া টা খুব বড় নয়। আজকে বিকেলে মিমকে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল। কাজের ব্যস্ততার কারণে ঘুরতে যেতে পারিনি তারপর আবার অনেক রাত করে বাড়ি ফিরেছি।
মিম - এই তুমি কি আমাকে সত্যি ভালোবাসো?
আমি - কেনো? কোনো সন্দেহ আছে নাকি?
মিম - তোমার বউ চলে যাচ্ছে তাকে তুমি আটকাবানা?
আমি - আমি জানি তুমি দরজা পর্যন্ত গিয়ে আর যাবেনা। ফিরে আসবে। প্রায়ইতো এরকম করো। তাই আর কিছু বলছিনা।
মিম - বুঝি,বুঝি সবই বুঝি। আমি তো তোমার কাছে এখন পুরাতন হয়ে গেছি। ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে তোমার মনে থাকেনা। খুব ব্যস্ত থাকো। আমার জন্য একটু সময় দিতে পারো না এ কথা বলেই পাগলীটাহ কান্না জড়ীত কণ্ঠে বললো।
আজকে সত্যিই চলে যাবো তোমাকে মুক্তি দিয়ে।
আমি - যাবে যাও। আমাকে মুক্তি দিয়ে যাচ্ছো,এটা কেমন কথা?
আর আমি কি তোমাকে বাঁধা দিয়ে রাখছি নাকি?
মিম - আমার কাছে টাকা নাই। যাবো কি করে?
আমি - তোমার বাপের বাড়ি তো বেশি দূরে না। হেঁটেই যেতে পারবা।
মিম - এতো রাতে টাকা ছাড়া কোথাও বের হয় কেউ?
আমি - আচ্ছা,মানিব্যাগ থেকে নিয়ে নাও।
মিম - আমি নেব কেনো? তুমি দাও।
আমি - আরে এতো ন্যাকামি করোনা তো।
তারপর মিম মানিব্যাগ থেকে কিছু টাকা নিয়ে বাপের বাড়ির উদ্যশে রওনা হল। দরজা পর্যন্ত গিয়েই আবার পেছনে ফিরলো।
আমি - কি হল?
ফিরে এলে যে।
মিম - তোমার কি কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই?
এতো রাতে একটা মেয়ে একা একা যেতে পারবে? কিংবা যাওয়া উচিত।
আমি - আমি মুচকি হেসে বললাম জানতাম তুমি কোনো একটা অযুহাত বের করবেই।
মিম - তুমি আমাকে এগিয়ে দিয়ে আসো। তাহলেই হবে। আমি একা যেতে পারবো না।
আমি - দিন হলে তোমাকে আর বলতাম না। পারবো না।
মিম - কেনো পারবেনা?
আমি - দেখছোই তো লুঙ্গি পড়ে আছি,খালি গায়ে।
মিম - তো কি হয়েছে। বাহিরে যে অন্ধকার লুঙ্গি ছাড়া গেলেও কেউ দেখবেনা।
পাগলীটার জোড়াজুড়িতে।
আমি না পেরে লুঙি পড়েই বের হই। সাথে একটা গেঞ্জি নিয়ে নিলাম।
মিম - ব্যাগটাও কি আমাকে নিতে হবে?
কেমন স্বামী তুমি?
বউ কে দিয়ে এতো ভাড়ি একটা ব্যাগ কেউ নেওয়াই?
আমি - তোমার সাথে কথায় পারা যাবেনা। দাও, ব্যাগটা আমাকে দাও। অতঃপর ব্যাগটা নিয়ে বাসস্টপ এর দিকে রওনা হলাম।
মিম - এই থামো থামো।
কোথায় যাচ্ছি আমরা?
আমি - কোথায় মানে?
যেখানে বাস থামে সেখানেই যাচ্ছি। ওখান থেকে সোজা তোমার বাপের বাড়ি মানে আমার শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে। তোমাকে দিয়ে চলে আসবো।
মিম - তুমি তো বলেছিলে,হেঁটেই যাওয়া যাবে। তাহলে আজকে হেঁটেই যাবো।
আমি - পাগল নাকি। হেঁটে যেতে মিনিমাম দুইঘন্টা সময় লাগবে।
আর ওটা আমি এমনিতেই বলেছি।
মিম - না আমি হেঁটে হেঁটেই বাপের বাড়ি যাবো।
বউ আমার বড্ড রাগী। এখন যদি তাঁর কথা না শুনি, তাহলে রাস্তার মধ্যেই কান্নাকাটি শুরু করে দিবে। তাই বাধ্য হয়েই হাঁটা শুরু করে দিলাম।
মিম - আরে,তুমি কথা বলছো না কেনো?
আমি - কি বলবো?
মিম - আহারে বেচারা,বউ চলে যাবে দেখে মনটা খারাপ?
ওতো বড় বিছানায় একা থাকতে হবে ভেবে খারাপ লাগছে হয়তো।
রান্না করতে হবে,কাপড় কাঁচতে হবে। কি কষ্টটাই না হবে। আমার তো এসব ভাবতেই কেমন জানি লাগছে।
আর তোমাকে তো এসব করতে হবে? তোমার খারাপ লাগবে না?
আমি - তুমি কি আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিচ্ছো?
মিম - আচ্ছা, বল?
আমি - আমি একা থাকতে পারবো তোমাকে ছাড়া।
আর হোস্টেল এ থাকতে রান্না করে খেয়েছি,নিজের কাপড় নিজেই ধুয়েছি। তাই এসব নিয়ে আমাকে ভয় দেখাবানা।
মিম - আচ্ছা বাদ দাও।
ফুসকা খাবো।
আমি - এই সময় ফুসকা খাবে?
মিম - হ্যাঁ, আর তো আমাদের কখনো দেখা হবেনা। তাই আজকেই জীবনে শেষবারের মতো ফুসকা খাবো।
আমি - ফুসকা নিয়ে এসেছি। খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো।
মিম - আমি খেতে পারবো না। তুমি নিজ হাতে খাওয়াই দাও।
সারাজীবন তুমি খাওয়াইয়া দিছো। আজকেও তুমি খাওয়াইয়া দিবা।
আচ্ছা,তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবা?
আমি - হুম,পারবো।
মিম - কষ্ট হবেনা?
আমি - না হবেনা।
মিম - মিথ্যা বলো কেনো?
আমি - জানিনা।
ফুসকা শেষ করে আবার হাঁটা শুরু দিলাম।
মিম - এই এদিকে এসো। বিদায় মুহূর্তে কেউ এতো মন খারাপ করে থাকে?
সবসময় তো আমার আঁচলের নিচেই থাকতা। আজকে এতো দূরত্ব দেখাচ্ছো কেনো?
আমি - ফালতু কথা বলবানা। তোমার অাঁচলের নিচে থাকতাম সবসময়।এটা কেমন কথা?
মিম - শেষবারে মতো আমার হাতটা একটু ধরবা। তোমার কাঁধে মাথা রেখে কিছু পথ হাঁটতে চাই।
পাগলীটাহ আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। আর আমার কাঁধে মাথা রেখে হেঁটে চলেছে ।
আর বলে চলছে আমি চলে গেলে তোমার ভালো লাগবে?
না।
আমাকে ছাড়া থাকতে তোমার খারাপ লাগবে না?
আমি - হুম লাগবে।
মিম - তাহলে তুমি আমাকে আসতে দিলে কেনো?
আমি - জানিনা।
মিম - তুমি কি জানো? আমার দেহ,মন,প্রাণ সব তোমার ইচ্ছেতেই চলে। তোমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারিনা আমি।
আমার হৃদয়ের রাজা তুমি। আমার রাজ্যে তুমি ছাড়া অন্য কারো বিচরণ নেই।
আমি - তাহলে আমাকে ছেড়ে চলে আসলে কেনো?
মিম - কে বলল চলে এসেছি।
রাস্তা ঘুরো। বাপের বাড়ি যামুনা।
বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাওনাই। তাই ভাবলাম কিভাবে তোমাকে নিয়ে বাহিরে বের হওয়া যায়,ফুসকা খাওয়া যায়। এমনিতেই তো এতো রাতে বাইরে বের হইতা না। তাই এরকম করলাম।
আমি - এতো কষ্ট করালে কেনো আমায়?
মিম - দুঃখিত,আমার জান পাখিটা।
চলো,আজকে তো অনেক রাত বাকি। বাকি রাত টুকু তোমাকে এতো ভালোবাসা দিবো যে পৃথিবীর সব কষ্ট তুমি ভূলে যাবে।
আমি - জানি, জানি। আর বলতে হবেনা। শুধু মুখে বলো। ঘুমানোর সময়তো একটু জড়িয়েও ধরতে দাওনা। মাঝখানে কোল বালিশ রেখে দাও।
মিম - আগুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আচ্ছা,চল বাসায় যাই আগে। তারপর তোকে বুঝাবো মজা।
পাগলীটাহ আবার রাগ করেছে। তবে এবার সে বাপের বাড়ি যাচ্ছেনা। স্বামীর বাড়ি যাচ্ছে।
আমি মিমির পিছু পিছু হাটতে শুরু করলাম নিজ বাড়ির দিকে।
“আসলে ভালোবাসার মানুষকে কখনো যেতে দেওয়া উচিত না। যেভাবেই হোক তাকে আটকে রাখা উচিত। কারণ সে যাওয়ার সময় একা চলে যায়না। অন্য একজনের সুখ, শান্তি, ভালোবাসা, ভালোথাকা সাথে করে নিয়ে যায়”
সম্পাদক: এম. আই. সিয়াম || মোবাইল: ০১৭১০৩০২১২৬ || ই-মেইলঃ dbnews71.bd@gmail.com
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | ডিবি নিউজ ৭১