২৪ ডিসেম্বর বিএনপিসহ জোটের দলগুলো সব বিভাগীয় ও জেলা সদরে গণমিছিল করেছে। ঢাকায়ও ওই দিন গণমিছিল করার কথা ছিল। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কারণে ওই দিনের ঢাকার কর্মসূচি পিছিয়ে আজ ৩০ ডিসেম্বর করা হয়। একই দিন রংপুর মহানগরেও গণমিছিল হবে। তবে ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে বিএনপি ও জামায়াত কর্মসূচি পালন করলেও অন্যান্য দলকে সেভাবে দেখা যায়নি। কার্যত ঢাকায় আজই সরকারবিরোধী সব দল ও জোট যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে।
বিএনপিসহ অন্যান্য দল ও জোটের নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা আজ শান্তিপূর্ণভাবে গণমিছিলের কর্মসূচি সম্পন্ন করতে চান। যুগপৎ আন্দোলনের এই কর্মসূচি থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। রাজবন্দীদের মুক্তি এবং দেশব্যাপী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও গায়েবি’ মামলা করার বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদী গণ-অবস্থান’ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। আগামী ১১ জানুয়ারি ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে একযোগে এ কর্মসূচি পালন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির সূত্র জানায়, মূল দলসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে আজকের গণমিছিলের স্থান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। জুমার নামাজের পর বেলা আড়াইটায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতা-কর্মীরা জমায়েত হবেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর নয়াপল্টন থেকে গণমিছিল শুরু হয়ে কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ হয়ে মগবাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হবে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।
দলের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গণমিছিলের জন্য ফকিরাপুল-দৈনিক বাংলা সড়ক থেকে নাইটিঙ্গেল পর্যন্ত কে কোন জায়গায় থাকবেন, সেটি মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিসহ ১৩টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মূল মঞ্চে থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা ৩২টি রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকায় এ গণমিছিল করছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গোলাপবাগে বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে বিএনপি এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল।
গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও গণমিছিল কর্মসূচির সমন্বয়কারী এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে মগবাজার পর্যন্ত গণমিছিল করার অনুমতি পেয়েছি। আমাদের গণমিছিল হবে শান্তিপূর্ণ।’
এ বিষয়ে গতকাল ঠাকুরগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করলে কোনো আপত্তি নেই। যদি বিএনপি ভাঙচুর করে, অগ্নিসংযোগ করে, রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় এবং রাস্তায় বসে অবরোধ করে, তাহলে নিরাপত্তা বাহিনী বসে থাকবে না, নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কাজ করবে।
বিএনপির সূত্র জানায়, গণমিছিলের সম্মুখে থাকবে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। তাদের নাইটিঙ্গেল মোড়ে থাকতে বলা হয়েছে। মিছিলে মহিলা দলের পর থাকবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। এরপর নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কের ঢাকা ব্যাংকের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, আনন্দ ভবনের সামনে কৃষক দল, হকস বে’র সামনে স্বেচ্ছাসেবক দল, ভিক্টরি হোটেলের সামনে পেশাজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা দল, কড়াই গোশত রেস্টুরেন্টের সামনে যুবদল, চায়না টাউন মার্কেটের সামনে ঢাকা জেলা বিএনপি, জোনাকি সিনেমা হলের সামনে শ্রমিক দল, পল্টন থানার বিপরীত পাশে মৎস্যজীবী দল, তাঁতি দল, ওলামা দল এবং জাসাস থাকবে। এ ছাড়া ফকিরাপুল থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত সড়কে থাকতে বলা হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিকে। প্রতিটি স্থানের জন্য বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সুনির্দিষ্ট করে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
গণমিছিলের ট্রাকে থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শাহজাহান ওমর, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।
এদিকে যুগপৎ আন্দোলনের গণমিছিল কর্মসূচি নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। জানা গেছে, বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা এবং গণমিছিল-পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা সাইফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সম্ভব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘সরকারি দলের উসকানি পরিহার করে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও গণমিছিল কর্মসূচি সমাপ্ত করতে চাই।’
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন উপস্থিত ছিলেন। গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ ও গণ অধিকার পরিষদের রাশেদ খান।