নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে (১৪) অপহরণ করেছে দশম শ্রেণির এক ছাত্র। গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের চরমজিদ গ্রামের এ ঘটনা ঘটে। অপহরণের ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
অপহৃত ওই ছাত্রী উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চরমজিদ গ্রামের মো. গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। অভিযুক্ত মো. রায়হান (১৮) একই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পূর্ব চরমজিদ গ্রামের আবুল কাশেম কালু ব্যাপারীর ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অপহৃত ছাত্রী স্থানীয় হাবিবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত মো. রায়হান একই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। রায়হান বিভিন্ন সময় ওই ছাত্রীকে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার সময় প্রেম নিবেদনসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখাতো। পরে কৌশলে গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৫টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে নেয়।
অপহৃত ছাত্রীর বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি চরজব্বর থানায় অভিযোগ দিয়েছি। ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো খবর না পেয়ে আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি। আমি অভিযুক্তের বাবা আবুল কাশেম কালু ব্যাপারীকে বিষয়টি জানানোর পর থেকে তিনি উল্টো আমাকে হুমকি দিচ্ছেন।
চরজব্বর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে গিয়েছি। অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করি খুব দ্রুত আমরা উদ্ধার করতে পারব।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে অভিযুক্ত রায়হানের বড় ভাই মো. রাকিবকে (২২) চরজব্বর থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে আনেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হোসেন। থানায় ডেকে এনে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রাকিবের পরিবার। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হোসেনকে বদলি করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। এছাড়া নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ভুক্তভোগী মো. রাকিব বলেন, আমাকে টেনে থানায় নিয়ে যান এসআই মোজাম্মেল হোসেন। তারপর মারধর করেন। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
ভুক্তভোগী রাকিবের বাবা আবুল কাশেম কালু ব্যাপারী বলেন, আমার ছেলে রায়হান অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং ওই স্কুলছাত্রী মেয়েও অপ্রাপ্তবয়স্ক। আমরা অভিভাবকরা যদি আগে টের পেতাম তাহলে এমন কিছু ঘটতে দিতাম না। এই ঘটনায় রায়হানের বড় ভাই রাকিবকে এসআই মোজাম্মেল অতর্কিতভাবে হামলা করেছে। আমরা বিষয়টি পুলিশ সুপার স্যারকে জানানোর পর তিনি এসআইকে ক্লোজড করেছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হোসেন বলেন, অভিযোগ তদন্তের জন্য অর্থাৎ অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধারের জন্য রাকিবকে ডেকে এনেছিলাম। সে অনেক ধস্তাধস্তি করে। তাকে কেন আনা হয়েছে এটা বলে সে চেঁচামেচিও করে। তবে আমি তাকে মারধর করিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মারধরের বিষয়ে এসআই মোজাম্মেল হোসেনকে পুলিশ লাইন্সে যুক্ত করার পাশাপাশি তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। পরে বিস্তারিত জানাতে পারব।