ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) খালেদা জিয়া হলের এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তা ও তার সাথে থাকা বন্ধুকে মারধরের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য বিষয়টি আগামীকাল প্রক্টরিয়াল বডির হাতে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, খালেদা হলের ২০৪ নং কক্ষের একটি সিট নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দা সায়মা রহমান ওই কক্ষের জানালার পাশের সিটে থাকতে চায়। এমতাবস্থায় ওই কক্ষে থাকা সিনিয়ররা এতে রাজি না হয়ে তাকে দরজার পাশের সিটে থাকতে বলেন। এ বিষয়টি নিয়ে ওই ব্লকের সিনিয়র শিক্ষার্থী পপি আক্তার (বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। পরে সে তার প্রেমিক ও ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান হাফিজকে বিষয়টি জানান।
এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শাখা ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাফিজ, শাহীন আলম ও মাসুমসহ কয়েকজন নেতা, কর্মী প্রধান ফটকের সামনে পপি আক্তারের গতি রোধ করেন। পরে তাকে হেনস্তা ও তার সাথে থাকা বন্ধুকে মারধরের অভিযোগ করেন পপি। এরপর থেকে খালেদা জিয়া হলের শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এসময় তারা জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিকে সায়মা রহমানকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে হল কর্তপক্ষ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা।
এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীকে হল থেকে বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল, হলের ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ৪ দফা দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা হল প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়।
এদিকে পপিসহ মোট ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে হল প্রভোস্ট বরাবর র্যাগিং ও শারীরিকভাবে হেনস্তার অভিযোগ এনে পাল্টা লিখিত অভিযোগ করেছে সায়মা রহমান।
পরে শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন, হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী ও হলের হাউজ টিউটরদের উপস্থিতিতে দুইটি আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠিত করা হয়।
এতে পপির বিরুদ্ধে সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হুদাকে আহবায়ক ও সহকারী অধ্যাপক মাহবুবা ছিদ্দিকা ও নাহিদা আক্তারকে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সৈয়দা সায়মা রহমানের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়াক হিসেবে আছেন সহকারী অধ্যাপক মাহবুবা ছিদ্দিকা। তিন সদস্যের কমিটির অন্য দুইজন হলেন সহকারী অধ্যাপক ড. নাজমুল হুদা ও নাহিদা আক্তার। তারা সবাই খালেদা জিয়া হলের হাউস টিউটর হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী বলেন, ‘আজ ট্রেজারার ও প্রক্টর স্যারসহ আমরা ছাত্রীদের সঙ্গে বসেছি। সেখানে হলের দেড়শতাধিক ছাত্রীর স্বাক্ষরসহ সায়মার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করে তার সিট বাতিলের দাবি করে ও হেনস্তার অভিযোগে অভিযুক্ত বিচারের দাবি করেছে। আমরা সায়মাকে হল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছি এবং হেনস্তার অভিযোগ থাকা ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার জন্য প্রক্টরিয়াল বডির নিকট সুপারিশ করেছি। এ ছাড়া অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছি। অন্যদিকে সায়মা আলাদাভাবে আরেকটি অভিযোগ দিয়েছে এর ভিত্তিতেও তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘অধিকতর তদন্তের জন্য হল কর্তৃপক্ষ আগামীকাল প্রক্টরিয়াল বডির কাছে বিষয়টি হস্তান্তর করবে। তারপর আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিবো এবং পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করবো।’