প্রথম মানব ও প্রথম নবী হজরত আদম (আ.)–কে সৃষ্টি করার পর তিনি একাকিত্ব অনুভব করলেন। তাঁর অস্থিরতা দূর করার জন্য মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর সঙ্গী হিসেবে আদি মাতা বিবি হাওয়া (আ.)–কে সৃজন করলেন।
এখান থেকেই শুরু যুগলবন্দী দাম্পত্যজীবনের। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মহাপরিকল্পনায় বাবা আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.) দুনিয়াতে এলেন। তাঁদের ঔরসজাত সন্তানেরাই পৃথিবী সাজিয়েছে। আর সে সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে এই বিবাহবন্ধন ও দাম্পত্যবিধান।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই মহান সত্তা! যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও তা হতে তার জোড়া সৃষ্টি করেন; যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করে।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ১৮৯)
দাম্পত্যজীবন শরিয়তসিদ্ধ একটি আইনগত সম্পর্ক হলেও এর মূল হলো ভালোবাসা ও মায়া–মমতা। কোরআন মজিদের বর্ণনা, ‘এবং তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য হতে জোড়া সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের নিকটে শান্তি পাও; এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ২১)
বিয়ের তিনটি অনুষঙ্গ: প্রস্তাব গ্রহণ, সাক্ষী ও মহর। ‘মহর’ হলো বিয়ের সময় বর কর্তৃক কনেকে প্রদত্ত সম্মানী, যার মাধ্যমে সে স্বামীর অধিকার লাভ করে। মহর নগদে প্রদান করা উচিত। উভয় পক্ষের সম্মতিতে আংশিক বা সম্পূর্ণ বাকিও থাকতে পারে। তবে তা অবশ্যই পরিশোধযোগ্য। জীবনে পরিশোধ না করলে মৃত্যুর পর ঋণ হিসেবেও সম্পদ বণ্টনের আগে পরিশোধ করতে হবে।
নগদ প্রদানকৃত মহরা কিংবা মহরের অংশবিশেষকে ‘মহরে মুআজ্জাল’ (মিম, আইন, জিম, লাম) অর্থাৎ তাৎক্ষণিক পরিশোধিত মহর বলে। বাকিতে পরিশোধযোগ্য মহর বা মহরের অংশবিশেষকে ‘মহরে মুআজ্জাল’ (মিম, হামজাহ, জিম, লাম) অর্থাৎ বিলম্বে পরিশোধিত মহর বলে। শব্দ দুটির বাংলা রূপ প্রায় একই।
বিয়ের আগে বিবাহবিষয়ক জ্ঞান থাকলে সতর্ক থাকা যায়। ‘পুরুষ নারীর ওপর দায়িত্বশীল; কারণ, আল্লাহ তাদের একের ওপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে পুরুষ তাদের ধনসম্পদ ব্যয় করে।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৪) বিয়ের পর স্বামীর ওপর তিনটি দায়িত্ব বর্তায়: স্ত্রীর ভরণপোষণ, পোশাকপরিচ্ছদ ও আবাসনব্যবস্থা করা। স্বামীর প্রতি ওয়াজিব হলো এমন একটি গৃহে স্ত্রীর আবাসনব্যবস্থা করা, যে ঘরে স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া কেউ প্রবেশ করবে না।
এমনকি স্বামীর পরিবারের লোকও নয়, সন্তানও নয়। তা হতে হবে রান্নাঘর ও স্নানাগারসহ স্বয়ংসম্পূর্ণ আবাসনব্যবস্থা, যাতে তালাবদ্ধ করার ব্যবস্থাও থাকবে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ.)–এর মতে সামর্থ্যবান স্বামীরা স্ত্রীর জন্য একজন পরিচারিকার ব্যবস্থা করবেন। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)–এর মতে, স্ত্রীর গৃহকর্মের জন্য একজন পরিচারিকা এবং বাইরের কাজের জন্য একজন পরিচারকের ব্যবস্থা করা স্বামীর কর্তব্য। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ.)–এর আরেকটি মত হলো, একজন পরিচারিকাই উভয় কাজের জন্য যথেষ্ট হবে। ইমাম মুহাম্মাদ (রহ.)–এর মতে, অসচ্ছল হলেও একজন পরিচারিকার ব্যবস্থা করা ওয়াজিব। (শরহে বেকায়া, উমদাতুর রেআয়া, দ্বিতীয় খণ্ড, খোরপোশ অধ্যায়, পৃষ্ঠা: ১৪৯-১৫১)।
স্ত্রীর দায়িত্ব হলো স্বামীর সংসারের দেখাশোনা, তদারক করা ও স্বামীর সম্পদ হেফাজত করা এবং সন্তান প্রতিপালন করা। কোরআনুল কারিমের বর্ণনা, ‘সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ যা সংরক্ষিত করেছেন, তা হেফাজত করে।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৪)