আবির হোসেন, ইবি প্রতিনিধি: ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা। প্রধান ফটকে সেলফি ও ছবি তুলতে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও ছবি আপলোড করছেন। এদিকে ১৭৫ একরের ক্যাম্পাসকে সাজানো হয়েছে রঙ-বেরঙে। আলোকসজ্জার ঝিকিমিকি আলো প্রফুল্লিত করছে শিক্ষার্থীদের মন। পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে বিশ্বাবিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা। কারণ রাত পেরুলেই ইসলামী বিশ্বাবিদ্যালয়ের জন্মদিন।
আগামীকাল মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) ৪৪ বছরে পা রাখবে স্বাধীনতাত্তোর প্রতিষ্ঠিত প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। সেই উপলক্ষে পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে বিশ্বাবিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ক্যাম্পাসকে সাজানো হয়েছে নবরূপে। প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়াতেই রঙ-বেরঙের ঝিকিমিকি আলো যেন নজর কাড়ছে। একটু সামনে এগিয়ে গেলেই প্রশাসন ভবনের লাল-নীল আলোতে আটকে যাচ্ছে চোখ। প্রধান ফটক থেকে বাম পাশের রাস্তা ধরে কিছু দূর এগিয়ে গেলেই সাদ্দাম হোসেন হল। হলের দেয়ালে ঝুলন্ত অবস্থায় রংবেরং আলো জ্বলছে।
এরপর একটু এগিয়ে হাতের বাম পাশে তাকালে জিয়াউর রহমান হল ও লালন শাহ্ হল চোখে পড়ে। নবরূপে সাজানো হয়েছে হল দুটিকে। সোজা রাস্তা ধরে এগুলোই শেখ রাসেল হল ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল। ঝলমলে আলোয় এই এলাকার দৈনন্দিন রাতের দৃশ্য একদম পরিবর্তন হয়েছে।
হলের সামনের রাস্তা ধরে আর একটু এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও খালেদা জিয়া হল। এই হলগুলোও বর্ণিল সাজে সেজেছে। গায়ে মেখেছে নতুন রং। ঝাড়বাতি গায়ে জড়িয়ে আলোয় ঝলমল করছে। এসব হলের সামনে ছবি তুলতে ভীড় করছেন শিক্ষার্থীরা। সব কিছু যেন বলে দিচ্ছিল রাত পোহালেই ১৭৫ একর এলাকার ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্মদিন।
এদিকে ৪৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ৪৪ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসকে ঘিরে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন, মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি, আলোচনাসভা, কেক কাটা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়সভা।
দিবসটি উপলক্ষে বুধবার সকাল পৌঁনে ১০টার দিকে প্রশাসন ভবন চত্বরে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করবেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান। এসময় উপস্থিত থাকবেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া এবং রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ. এম. আলী হাসান। একই সময়ে প্রভোস্টগণ স্ব-স্ব হলে জাতীয় পতাকা ও হল পতাকা উত্তোলন করবেন।
পতাকা উত্তোলন শেষে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। এরপর মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরাল চত্বরে শান্তির প্রতীক পায়রা ও আনন্দের প্রতীক বেলুন উড়িয়ে ভাইস চ্যান্সেলর ৪৪তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) সহ সকল পর্যায়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ এসময় সেখানে উপস্থিত থাকবেন।
কর্মসূচি উদ্বোধন শেষে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরাল চত্বর থেকে উপাচার্যের নেতৃত্বে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত)সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পর্যায়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি বের করা হবে। প্রতিটি বিভাগ ও হল স্ব-স্ব ব্যানার নিয়ে র্যালিতে অংশগ্রহণ করবে। র্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাংলা মঞ্চে শেষ হবে।
র্যালি শেষে বাংলা মঞ্চে আলোচনাসভা ও কেক কাটা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম প্রধান অতিথি উপস্থিত থাকবেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। সভাপতিত্ব করবেন ৪৪তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন।
দিবসটি উপলক্ষে বাদযোহর কেন্দ্রীয় মসজিদ, আবাসিক এলাকার মসজিদ ও সকল হল মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৩টায় প্রশাসন ভবনের তৃতীয় তলার সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, সকল অফিস প্রধান এবং সকল সমিতির প্রতিনিধিদের ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছরের অগ্রগতি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা ও প্রশ্ন-উত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।