স্টাফ রিপোর্টার: বেশি লাভের আশায় দিনাজপুর জেলায় আগাম আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় স্বল্পমেয়াদী আগাম আমন ধান ঘরে তুলে সে জমিতেই আলুর জন্য হালচাষ, পরিচর্যা, সার প্রয়োগ, হিমাগার থেকে বীজ সংগ্রহ ও বপনে ব্যস্ত সবাই।
তবে সার নিয়ে বিপাকে রয়েছেন চাষিরা। কৃষককে ৭৫০ টাকার ৫০ কেজির বস্তার পটাশ কিনতে হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় এবং ১১০০ টাকার ৫০ কেজির বস্তা কিনতে হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়।
দিনাজপুর জেলায় এবার ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু হবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, বিঘাপ্রতি ৩ ট্রলি গোবর সার, ২০ কেজি পটাশ ও ১ বস্তা ফসফেট সার দিয়ে আলু চাষের জন্য জমি তৈরি করেছেন কৃষকরা। জমি তৈরি করে বীজ আলু জমিতে লাইন ধরে রোপণ করছেন। এক বিঘা জমিতে প্রায় ১৪ মণ বীজ আলুর প্রয়োজন হয়। এসব বীজ আলু ৮০০ টাকা মণ হিসেবে ক্রয় করছেন কৃষকরা। এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে খরচ হয় ২৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। তবে বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ মণ আলুর ফলন হয়। লাগানোর ৫০ থেকে ৫৫ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলেন কৃষকরা। আগামী অগ্রহায়ণ মাসে আলু চাষের মৌসুম হলেও বেশি দাম পাওয়ার আশায় আশ্বিন মাসেই আগাম আলু চাষ করছেন কৃষকরা।
বিরামপুর উপজেলার আলুচাষি আফজল হোসেন জানান, তিনি মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেন। আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরুর আগেই প্রতিবছর এক বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেন। আগাম চাষের আলুর দাম অনেক বেশি পান। আগামী অগ্রহায়ণ মাসেই আলু বাজারজাত করতে পারবেন।
মাওলানা এমদাদুল হক জানান, কয়েক বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। তবে দাম বেশি পাওয়ার আশায় আগাম আলুর চাষ করছেন। প্রতিবছর নতুন আলু ১০০ টাকার উপরে দাম পাওয়া যায়। তিনি তার উৎপাদিত আলু স্থানীয় বাজারসহ রাজধানীতে পাঠান। আশা করছেন এবারও ভালো দাম পাবেন।
ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের আমডুঙ্গি (আলুরডাঙ্গা) গ্রামের চাষি শামিম হোসেন জানান, আগাম আলু লাগানো নিয়ে এক প্রকার প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। যার আলু যত আগে উঠবে; সেই কৃষক তত বেশি ভালো দামে বিক্রি করবেন। মৌসুমের শুরুতে বাজারে নতুন আলুর চাহিদা থাকে প্রচুর। ভোক্তার কাছে আগাম দিতে পারলে চড়া বাজারমূল্য পেয়ে দ্বিগুণ লাভবান হবেন।
উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের বেলাল হোসেন দুই বিঘা ও রাসেল তিন বিঘা জমিতে আগাম আলুর বীজ বপন করেছেন। তারা জানান, আগাম আলু উত্তোলন করতে পারলে পাইকারি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।
বেলাল হোসেন জানান, এ অঞ্চলের জমি উঁচু এবং বালুমাটি মিশ্রিত। ভারি বৃষ্টি হলেও তেমন কোনো বড় ধরনের ক্ষতির ভয় থাকে না। অতিবৃষ্টি হলেও শুকিয়ে যায় মাটি। তাই আগেভাগে দ্বিগুণ লাভের আশায় আগাম আলুবীজ বপন করছেন। তিনি আগাম রোজাডা জাতের আলুর বীজ বপন করছেন বলে জানান।
তবে কৃষকরা অভিযোগ করেন, তাদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। ৭৫০ টাকার ৫০ কেজির বস্তার পটাশ কিনতে হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় এবং ১১০০ টাকার ৫০ কেজির বস্তা কিনতে হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। এতে কিছুটা খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
খানসামা উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের পাকেরহাট আদর্শ গ্রামের আব্দুস সালাম বলেন, ‘গতবছর আগাম ধান কাটার পর ২৯ শতক জমিতে আলু উত্তোলন করে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দ্বিগুণ লাভ হয়েছে। এজন্য এবছর আরও বেশি জমিতে ৫০-৫৫ দিনে উত্তোলনযোগ্য জাতের আলু রোপণ করেছি। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গতবারের চেয়ে ভালো ফলনের আশায় মনের আনন্দে আলু রোপণ করছি। ১০ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করবো।’
গোয়ালডিহি গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগাম জাতের আলু উৎপাদন করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে চড়া দামে বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়। অন্য ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যাপক অবদান রাখে আগাম আলু। তাই আগাম আলু চাষ করি।’
বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার নিক্সোন চন্দ্র পাল জানান, চলতি আলু মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উপজেলার অনেক জায়গায় কৃষকেরা ভালো দাম পাওয়ার আশায় আগাম আলুর চাষ শুরু করেছেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মন আক্তার জানান, উপজেলায় চলতি বছর ১ হাজার ৯৯৪ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর আগাম আমন ধান ঘরে তুলে আগাম আলুচাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
খানসামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় জানান, এ উপজেলার মাটি আগাম আলু চাষের জন্য খুবই উপোযোগী। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঠের পর মাঠ আগাম আলু চাষে কোমর বেঁধে কাজ করছেন কৃষকরা।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, দিনাজপুর জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। খসড়া তালিকা অনুয়ায়ী দিনাজপুরে ৪৮ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হবে। এরমধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হবে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত ৫০০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু বীজ রোপণ হয়ে গেছে।