মোঃ গোলাম কাদের:
ভোলার ঘুইংগার হাটের হোমিও চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র মিহির বাবুর কাছে চিকিৎসা নিতে এসে ইয়ামিন নামের এক দরিদ্র যুবক খুন হয়েছে। গত ৫ মার্চ ২৪ ইং তারিখে বুধবার সন্ধার পরে ঘুইংগার হাটের মাছ বাজারে অবস্থিত মিহির বাবুর রয়েল হোমিও ক্লিনিকে খুনের ঘটনা সংঘঠিত হলেও ধুরন্ধর মিহির বাবু দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে এতদিন সু কৌশলে ওই খুনের ঘটনাটি পরিকল্পিত ভাবে ধামাচাঁপা দিয়ে রেখেছিল। অবশেষে সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করে মৃত্যুর আসল রহস্য উম্মোচন করেছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের আঃ রবের ছেলে ইয়ামিন (৩২) বিগত দেড়মাস যাবত হোমিও চিকিৎসক মিহির বাবুর কাছে এসে নিয়মিত চিকিৎসা নেয়। এর ধারাবাহিকতায় ৫ তারিখে বুধবার সন্ধায় তার চেম্বারে এসে চিকিৎসা নেয়ার জন্য অপেক্ষা করে ইয়ামিন ও তার মা আঞ্জুমান আরা বেগম। এসময় মিহির বাবু অন্য রোগীর চিকিৎসার জন্য কাঁচের বোতল জাতীয় ঔষধীয় কার্টুন উপর থেকে নামানোর সময় ইয়ামিন এর মাথায় সজোরে পড়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই ইয়ামিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
মৃতঃ ইয়ামিন এর মা আঞ্জুমান বেগম জানান, তার ছেলে ইয়ামিনের লিভার চিকিৎসার জন্য ঘুইংগার হাটের হোমিও চিকিৎসক মিহির বাবুর দারস্থ হন। ঘটনার প্রায় দেড়মাশ আগ থেকে মিহির বাবুর কাছে এসে ইয়ামিন চিকিৎসা নিচ্ছে। ওইদিন বিকেলে ইয়ামিনকে সাথে নিয়ে পশ্চিম ইলিশার বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে সড়কে এসে অটো রিকশাযোগে ঘুইংগার হাটে সড়কে নেমে পায়ে হেটে মিহির বাবুর চেম্বারে যায়। এ সময় তার চেম্বারে অনেক রোগী থাকায় তারা অপেক্ষা করেন। এরমধ্যে মিহির বাবু তার চেম্বারের উপর পাটাতন থেকে ঔষধীয় কাঁচের বোতল নামাতে গিয়ে আমার ছেলে ইয়ামিনের মাথার উপর সজোরে পড়ে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই অজ্ঞান হয়ে পরে। দীর্ঘ সময় সেখানে ওই অবস্থায় পড়ে থাকলেও ডাঃ মিহির বাবু বিষয়টি আমলেই নেয়নি। সে অন্য রোগি নিয়েই ব্যস্ত সময় পাড় করতে থাকে। আমি বার বার তাকে আমার ছেলের অবস্থার কথা বললেও সে কোন ব্যাবস্থা দেয়নি। অনেক সময় পর হঠাৎ বলে ভোলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে। আমি দিশেহারা হয়ে আমার এক আত্মীয় ভাতিজিকে ফোন দিলে সে কাঠালি থেকে অটোসহ এসে আমার ছেলেকে ধরাধরি করে অটোতে করে ভোলা হাসপাতালে নিয়ে রাত অনুমান ৯ টার পড়ে ভর্তি করাই। হাসপাতালে দুদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আমার ছেলের জ্ঞান না ফেরায় কর্তব্যরত ডাঃ উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে নেয়ার কথা বলেন। আমি মিহির বাবুর সাথে আর যত যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি সে আমাদের আর কোন ফোন ধরেনি। পরে নিরুপায় হয়ে বাড়িতে নিয়ে যাই। তখনো জ্ঞান ফিরেনি। ওই অবস্থায় পর দিন শুক্রবার ৮ মার্চ ভোলায় এনে মাথায় সিটি স্কিন করার পর ডাক্তার জানায় মাথায় ভারী আঘাতের ফলে কয়েক জায়গায় রক্তজমাট হয়েছে। ৮ মার্চ সিটি স্কিন শেষে বাড়িতে নেয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আমার ছেলে ইয়ামিন মৃত্যুবরণ করে।
ইয়ামিন এর মা আঞ্জুমান আরো জানান, মিহির বাবুর চেম্বারে ইয়ামিন এর মাথায় কার্টুন ফেললেও মিহির বাবু বিষয়টি ভিন্নখাতে নেওয়ার পায়তারা করছেন। তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংবাদকর্মীদের ম্যানেজ করার অপচেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ছেলে হত্যার ঘটনায় মিহির বাবুর উপযুক্ত বিচার দাবি করছেন ছেলে হারা অসহায় মা।
অভিযুক্ত চিকিৎসক মিহির বাবুর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি এমন কোন রোগীর চিকিৎসা করেন নি বলে জানান। অবশেষে আজ বুধবার ২৭-০২-২১ ইং তারিখে তার চেম্বারের আশেপাশের লোকজনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তার চেম্বারে গেলে একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, তার চেম্বারে অসতর্কতার কারনে ইয়ামিন এর মাথায় একটি ঔষধীয় কার্টুন পরলে তাৎক্ষণিক ইয়ামিন অসুস্থ হয়ে পড়েন।