স্বপন কুমার রায়, খুলনা ব্যুরো প্রধান:
ভূমিকম্প সহনশীলতা প্রকল্পের আওতায় যে ৪২টি ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে খালি করতে হবে।ভেঙে ফেলতে হবে ৩ মাসের মধ্যে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে সরকারি ও স্বায়ত্বশায়িত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর ভূমিকম্প সহনশীলতা প্রকল্প (আরবান রেজিলিয়েন্স) এর আওতায় ২ হাজার ৭০৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ২০৭টি হাসপাতাল, ৩৬টি থানা ও ৩০৪টি অন্যান্য ভবনের জরিপ চালানো হয়। এসব ভবনের মধ্যে ৫৭৯টির ‘প্রিলিমিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট’ (পিইএ) করা হয়। এতে ৪২টি ভবন অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে রিপোর্ট দেওয়া হয়।
মালিকরা নিজ উদ্যোগে এই ভবন আগামী তিন মাসের মধ্যে না ভাঙলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এসব ভবন ভেঙে দেবে। সেক্ষেত্রে মালিকপক্ষের কাছ থেকে খরচ আদায় করা হবে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ১৮৭টি ভবনকে ‘ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট’ করে সেগুলো মজবুত (রেক্টিফাই) করতে প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হবে। নগর উন্নয়ন কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্দিকবাজারে ক্যাফে কুইন ভবনে বিস্ফোরণে প্রাণহানি এবং সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার পর ভবনের নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। নগর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, এসব ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এ কারণে আমরা বলেছি সাত দিনের মধ্যে ভবন থেকে সবকিছু সরিয়ে নেওয়ার জন্য। এরপর তিন মাসের মধ্যে এসব ভবন ভাঙতে হবে। তিনি আরও বলেন, বেসরকারি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রাজউকের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। এসব ভবনের অ্যাসেসমেন্ট করে কমিটি একটি সিদ্ধান্ত নেবে। সিদ্ধান্তের পর তারা আমাদের সুপারিশ করবে। এসব সুপারিশ নগর উন্নয়ন কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে আলোচনা হবে কী প্রক্রিয়ায় এগুলো চিহিৃত করা যায়।
অতি ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি ভবনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০টি ভবন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ভবন, মাদ্রাসা বোর্ডের একটি ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি ভবন অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় রয়েছে।
যে ১৮৭টি ভবনকে রেট্রোফিটিং করতে হবে তারমধ্যে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১৫৪টি ভবন রয়েছে। এছাড়া ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির তিনটি, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চারটি, মাদ্রাসা বোর্ডের ছয়টি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১০টি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি ভবন আছে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা গনমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে ভবন নির্মাণ অনুমোদনের সময় কাঠামোগত নকশা দেখে না রাজউক। ভূমিকম্পসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী মাস থেকে রাজউকের অঞ্চল-৩ (মিরপুর) ও ৪-এ (মহাখালী) ভবনের নির্মাণ অনুমোদন দেওয়ার সময় স্থাপত্য নকশা, কাঠামোগত নকশার পাশাপাশি মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক ও অগ্নিনিরাপত্তা–সংক্রান্ত নকশা জমা নেওয়া হবে। আগামী মে থেকে পদ্ধতিটি পুরো রাজউক এলাকায় চালু করা হবে। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি পত্রিকাতে প্রকাশ করে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে।
রাজউকের এলাকা ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার। এতে ছোট-বড় ভবন ও স্থাপনা আছে ২১ লাখের বেশি। এর মধ্যে নরম ও শক্ত মাটিতে কী পরিমাণ স্থাপনা আছে, সেই তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত পরিচালিত রাজউকের এক জরিপের তথ্যমতে, রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও পল্লবীর ৯৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভবন; রামপুরা, মতিঝিল ও খিলগাঁওয়ের প্রায় ৯৭ শতাংশ ভবন; ধানমন্ডির প্রায় ৮৯ শতাংশ ভবন রাজউকের নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।