ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামের ‘কন্ঠ সদৃশ’ তিন পর্বের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে নয়টার দিকে ‘ফারাহ জেবিন’ নামক একটি ফেসবুক আইডি থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত ৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডের একটি ফোনালাপ পোস্ট করা হয়। পরে একই আইডি থেকে পরপর আরো দুইটি অডিও পোস্ট করা হয়। দ্বিতীয় অডিওটি ১ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড ও তৃতীয়টি ২ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের। ওই পোস্টের ক্যাপশনে ‘বিশ্ববিদ্যালয়র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা’ (কমিউনিকশন এন্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম) বিভাগের নিয়োগপ্রার্থী অলিউর রহমান অলির সাথে ড. সালামের (?) ফোনালাপ বলে দাবি করা হয়।
অডিওতে অলির সাথে নিয়োগ পরিক্ষার প্রশ্ন সরবরাহ সহ নানা বিষয়ে আলোচনা করতে শোনা গেছে ড. সালামকে (?) এদিকে এবিষয়ে ইবি থানায় সাধারন ডায়েরি (জিডি) করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, জিডি নং ৬৭২। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরো- ইবি ভিসির ‘কন্ঠ সদৃশ’ ফোনালাপ ফাঁসের প্রতিবাদ
এবিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, ‘ভিসি স্যার আমাকে জিডি করতে বলেছেন, তাই ইবি থানায় জিডি করেছি। অডিও পোস্টদাতার একাউন্টটি আইডেন্টিফাই করতে জিডি করা হয়েছে। অডিও কার এটা তো আমি জানিনা, এটা প্রশাসন বের করবে।’
প্রথম অডিওর ক্যাপশনে বলা হয় ‘গত ২৫ অক্টোবর ২০২২ গণ যোগাযাগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নিয়াগের লিখিত পরীক্ষায় তাঁর পছন্দের প্রার্থী অলিউর রহমান অলিকে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হওয়ার পুর্নবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেই প্রার্থীকে আবার নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রশ সরবরাহ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম।’ প্রথম অডিওতে অলি নামের প্রার্থীকে নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত হওয়া সম্পর্কে ড. সালাম (?) বলেন, ‘তিনজন এপ্লিকেন্ট ছিলো, তিনজনই হলে (উপস্থিত) হয়ে যেত। বোর্ডটা ই (স্থগিত) হইছে এই কারণে। আমরা ৩০ তারিখের পরই পূণর্বিজ্ঞাপনে যাছি। এতে ডিজএ্যাপোয়োএনমেন্টের কোনো কারণ নাই। আপনি শুধু এর পর তিনজন ক্যান্ডিডেড গোছান যে, তারা এপ্লাই করবে আপনি তাদের পয়সা দিয়ে দিবেন এবং ওরা এখানে জাস্ট এপিয়ার করবে। আর কিছু না। ডোন্ট গট ওরিড। ট্রেজারার আমাকে বলেছে এটা। কারণ তিনজন হলে কি আপনাদের কালকে আসতে বলতাম, বলতাম যে ‘যান’, ওকে দেখতামও না। আচ্ছা আপনি সব দিয়ে রেডি থাকেন। যেদিন সব দিয়ে দিবেন তার ঠিক একুশ দিনের মাথায় গোছায় দিবো।’
এদিকে অডিওর দ্বিতীয় পর্বের ক্যাপশনে বলা হয়, ‘এভাবেই নিয়োগ বোর্ডের আগে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করেন ড. শেখ আবদুস সালাম।’ অডিওতে ড. সালাম (?) বলেন, ‘২০২৩ সাল বাংলাদেশের জন্য দশটি চ্যালেঞ্জ, চ্যালেঞ্জগুলা ইংরজিটা করুন, এটা হয়তা কনটেম্পোরারি বিষয়, পরীক্ষায় (থাকব?)। আর খুব বেসিক কনসেপ্টসগুলা আছে না? কমিউনিকেশন এপ্রিহেনশন, তারপর গত ইসে (পরীক্ষায়) যা যা ছিলো। রাইট টু ইনফরমেশন ও চ্যালেঞ্জগুলা ইংরজিতে আরকি। একলাইন দুই লাইন করে ছোট ছোট করে। বুঝতে পারছেন?’
এছাড়া আরো একটি পর্বে পরীক্ষার প্রশ্ন সংক্রান্ত আলোচনায় ড. সালাম (?) বলেন, ‘আমি তো আপনাকে সোর্সটা সহ দিয়েছি। দেখেন ওখানে। খুব চমৎকার করে একেবারে চুম্বক লেখা আছে আরকি, দশটা আইটেম। এরকম দশটা ইস্যু কি? এরকম যদি কাউকে লিখতে দেয়, তাহলে সেটার একটা ইংরজিতে প্রস্তুতি রাখেন। এখন আমি এইটুকু যা বললাম। আর ট্রেজারারের সাথে একটু যোগাযোগ রাখেন। আচ্ছা যা হোক ওনাকে একটু বুঝায় বলেন। আর ওনাদের সাথে একটু যোগাযোগ করে আইসেন।’
অডিও পোস্টের ক্যাপশনে অডিওতে সরবারহকৃত প্রশ্নগুলো নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরীপ্রত্যাশী অলিকে সরবরাহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে ফোনালাপের অডিওতে অপর পক্ষের কোনো কথা শোনা যায়নি।
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আন নূর জায়েদ বিপ্লব বলেন, ‘শুক্রুবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জিডি করেছেন। সেখান একটি আইডি থেকে ভিসির ‘কন্ঠ সদৃশ’ অডিও ফাঁস হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।’
এবিষয়ে ভিসির সাথে মুঠাফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লখ্য, গত ২৫ অক্টাবর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকশন এন্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। এতে এ্যাসিস্ট্যাট প্রফেসর পদে আবেদনকারীরা হলেন ড. অলিউর রহমান, মোশারফ হোসেন ও বিউটি মন্ডল। এসময় বোর্ডের কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় বোর্ড স্থগিত হয়। পর গত ২ ডিসেম্বর আবারো পূণর্বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে কর্তৃপক্ষ।