সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর ও বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তার একটি শাখা নদী। আর সেই নদী পারাপারের জন্য দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ব্যবহৃত হতো নৌকা। তবে এখন আর তেমন নৌকাও দেখা যায় না। কারণ সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি কাঠের সাঁকো। নড়বড়ে এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিনই যাতায়াত করে দুপাড়ের ২০ হাজার বাসিন্দা। ঝুঁকিপূর্ণ এই কাঠের সাঁকো দিয়ে চলাচলের সময় প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।
জানা যায়, ২০১৭ সালে তিস্তার শাখা নদীর ওই স্থানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহীম খলিলুল্যাহ’র তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ ও এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সহযোগিতায় সাঁকোটি সংস্কার করা হয়। এতে ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা ও উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকার সাথে চরাঞ্চলের মানুষজনের যাতায়াতের পথ সুগম হয়। এতে চরাঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মানও বেড়ে যায়। এমনকি ছোট-খাটো যানবাহনে মালামাল ও কৃষিপণ্য পরিবহন করা হয় এ সাঁকো দিয়ে। এছাড়াও স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকরাও নির্বিঘ্নে যাতায়াত করেন এ সাঁকো দিয়ে।
এদিকে, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ঢলে কচুরি পানার চাপে কাঠের সাঁকোটি একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। এমতাবস্থায় চলাচলের উপযোগী করতে কয়েকদিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে কচুরি পানা অপসারণের কাজ করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, এলাকার লোকজন প্রায় ৫০ বছর ধরে নৌকা দিয়ে পাড়াপাড় করতো। ২০১৭ সালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য একটি কাঠের সাঁকো করে দেন। পরে ২০২০ সালের প্রবল বন্যায় সাঁকোটি ভেঙে ভেসে যায়। এমতাবস্থায় একই বছর চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দে পূণরায় একটি সাঁকো নির্মাণ করে দেন। সেই সময় থেকে প্রতিবছর সংস্কার করে ওই সাঁকো দিয়ে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছেন। সম্প্রতি কচুরিপানা চাপে সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকো দিয়ে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। কাঠের সাঁকোর কারণে কৃষি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন দিকে এখনো পিঁছিয়ে আছে গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলো। চরাঞ্চলের মানুষের উন্নত জীবন যাত্রার ধারা অব্যাহত রাখতে সাঁকোটির স্থানে সরকারিভাবে ব্রীজ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।
স্কুলছাত্র মো. নাহিদ মিয়া বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক কষ্ট করে প্রতিদিন এই সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। এখানে একটা ব্রিজের জরুরি প্রয়োজন।
কৃষক আজম মিয়ার বলেন, চরাঞ্চলের কৃষকরা অনেক কষ্ট করে ফসল ফলাই। যাতায়াতের সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে আমরা ন্যায্য দাম পাইনা। এইখানে একটা ব্রিজ হলে আমাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে যেতে পারবো, তখন পণ্যের ন্যায্য দামও পাব।
তালুক বেলকা গ্রামের বাসিন্দা ও মুদি ব্যবসায়ী মাইদুল ইসলাম বলেন, নদীতে ব্রিজ না থাকায় দোকানের মালামাল নিয়ে আসতে খরচ বেশি পড়ে। ব্রিজ হলে খরচ অনেকাংশেই কমে আসবে।
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক শিহাব মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, চরাঞ্চলের মানুষ সব সময় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। নদীতে ব্রিজ না থাকায় রোগীদের বহনের জন্য এই এলাকায় কোন অ্যাম্বুলেন্স আসেনা। এজন্য রোগীকে সময় মতো হাসপাতালে নিতে না পারায় অনেকেই বিনা চিকিৎসায় অকালে প্রাণ হারায়।
বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা ও শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নৌকা দিয়ে পারাপার করলেও কয়েক বছর ধরে কাঠের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পারাপার করে আসছে। এই স্থানে একটা ব্রিজ হলে চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।
ইউপি সদস্য মো. হাফিজার রহমান বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের একটাই দুঃখ এই তিস্তা নদীর শাখাটি। দীর্ঘদিন ধরে কাঠের সাঁকো পারাপারে সমস্যা হচ্ছে। সরকারিভাবে স্থায়ী একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ বলেন, প্রথম্বাত চেয়ারম্যান হয়েই ওই স্থানে একটি কাঠের সাঁকো করে দিয়েছি। একটি স্থায়ী ব্রিজের নির্মাণের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। আশা রাখি শীঘ্রই ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া যাবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. শামসুল আরেফিন খান বলেন, ওই স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণে অনুমোদনের জন্য পত্র পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প পাস হলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।