সাবেক এসপি বাবুল আক্তার ও বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনসহ চারজনের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমারের করা মামলায় বাবুল আক্তারকে ঢাকায় আনা হয়েছে।
ফেনী কারাগার থেকে তাকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) বাবুল আক্তারকে ঢাকার সিএমএম কোর্টে হাজির করা হবে।
ধানমন্ডি থানা পুলিশ জানিয়েছে, পিবিআই প্রধানের মামলায় সাবেক এসপি (বরখাস্ত) বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে। আদালতের অনুমতি পাওয়া গেলে মামলায় আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে।
সূত্রে বলছে, পিবিআই প্রধানের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ ডিজিটাল মাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মামলার আলামত হিসেবে যেসব কনটেন্ট পাওয়া গেছে তা সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে রিপোর্ট পাওয়া গেলে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে।
পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রো উত্তরের পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ মামলায় বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানি হবে। এসময় বাবুল আক্তারকে উপস্থিত থাকবেন।
পিবিআই প্রধানের মামলায় বাবুল আক্তারকে শ্যোনঅ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া বলেন, ‘আদালত রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পাবো।’
বুধবার (৯ নভেম্বর) রাতে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, ‘বাবুল আক্তার আমাদের কারাগারে আছেন। দুইদিন আগেই তাকে ফেনী কারাগার থেকে আনা হয়। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে।’
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে ডিএমপির ধানমন্ডি মডেল থানায় পিবিআই প্রধান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
মামলায় বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন, স্ত্রী হত্যায় কারাগারে থাকা সাবেক এসপি বাবুল আক্তার, তার ভাই হাবিবুর রহমান লাবু ও বাবা মো. আব্দুল ওয়াদুদ মিয়াকে আসামি করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন ধানমন্ডি মডেল থানার পরিদর্শক রবিউল ইসলাম।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে সম্প্রতি একটি ভিডিও প্রচার হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে পিবিআই প্রধানকে অভিযুক্ত করে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়। সেই তথ্য প্রচার করেন প্রবাসী ইলিয়াস হোসেন, বাবুল আক্তার ও তার ভাই হাবিবুর রহমান লাবুসহ চারজন। পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই ভিডিওসহ সব কিছুই ভুয়া ও বানোয়াট। তাই আইনি প্রতিকার পেতেই এ মামলা করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। ঘটনার সময় এসপি বাবুল আক্তার ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলায় মিতু হত্যাকাণ্ডে তারই সংশ্লিষ্টতা পায় পিবিআই।
অন্যদিকে গত বছরের ১২ মে আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন বাবুলকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা। ওই দিনই মামলাটিতে বাবুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে আছেন বাবুল।
এদিকে বনজ কুমারসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন বাবুল আক্তার। তবে সেই আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। অভিযোগে বলা হয়, পিবিআই অফিসে ৫৩ ঘণ্টা বাবুলকে আটকে রেখে নির্যাতন ও জোর করে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।