বছরের শুরু থেকে আলুর বাজার চড়া। গত দশ মাসে বেশিরভাগ সময় আলুর কেজি ছিল ৫০ টাকা বা তারও বেশি। অথচ আগের বছরগুলোতে একই আলুর দাম ছিল ২০-২৫ টাকা কেজি। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ কৃষিপণ্যটির দাম বাড়তে বাড়তে এখন ৭০ টাকায় উঠেছে। কোথাও কোথাও ৬৫ আবার বাজারে বড় দোকানে ৬০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। তবে আলুর এ অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় অস্বস্তিতে সাধারণ মানুষ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে আলুর দাম বাড়াকে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ উল্লেখ করে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশও করছেন। ঠিক এমন সময়ই আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ‘আমদানিতে সমাধান’ খুঁজছে সরকার।
গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সরকার খুচরা বাজারে আলুর দাম নির্ধারণ করে কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। সেই আলু এখন বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে, অর্থাৎ ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। দাম নির্ধারণের প্রায় দেড় মাসেও তা বাজারে কার্যকর করতে পারেনি সরকার। বাধ্য হয়ে সোমবার (৩০ অক্টোবর) আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাতে সায় দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজারে আলুর সরবরাহ বৃদ্ধি ও দাম স্থিতিশীল রাখতে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগ্রহী আমদানিকারকদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিনই অনুমোদনপত্র দেওয়া শুরু করার কথা জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে আলু আমদানির অনুমতি দিতে আরও মাসখানেক আগেই সুপারিশ করেছিল জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তখন সেই সুপারিশে কৃষি মন্ত্রণালয় সায় দেয়নি। এখন আবার এমন সময় আমদানির অনুমতি দেওয়া হলো যখন দেশের বাজারে কিছুদিনের মধ্যে শীতকালীন নতুন আলু উঠবে।
অন্যদিকে একই সময়ে প্রায় দেড় মাস আগে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো আমদানি শুরু হয়নি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে তিনটি কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে দেয়। সেগুলো হলো ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজ।
বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা (হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭ টাকা) এবং দেশি পেঁয়াজের দাম হবে ৬৪-৬৫ টাকা। তবে সরকারের এ নির্দেশনার প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো আলু, ডিম ও দেশি পেঁয়াজ নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না বাজারে। এ অবস্থায় আলু আমদানি নিয়েও সংশয়ের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশে আলু আমদানি হবে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতে আলুর দাম বাংলাদেশের তুলনায় বেশ কম। দেশটির কমোডিটি অনলাইনের তথ্যমতে, বর্তমানে ভারতে প্রতি কেজি আলুর গড় দাম ২০ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ২৬ টাকা। এ আলু আমদানি সম্ভব হলে খরচসহ ৩০ থেকে ৩২ টাকার মধ্যে বাজারজাত করা সম্ভব হবে, যা বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে আলুর দামের প্রায় অর্ধেক।
সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলছে, হিমাগার মালিকরা বাজারে পর্যাপ্ত আলু ছাড়ছেন না। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছেন। এমনকি হিমাগারে আলু গোপনে মজুত রেখে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছেন। এ অবস্থায় আমদানি ছাড়া কোনো সমাধান দেখছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মৌসুমের শুরুতে তারা যে আলু সংগ্রহ করেন, সেগুলো প্রতি বছর মে মাসের পর হিমাগার থেকে বের করা হয়। এবার আলুর সংকট থাকায় এপ্রিল মাস থেকেই আলু বের করা শুরু হয়েছে। এজন্য হিমাগারে আলুর সংকট আছে। মজুত আলু ২৫ থেকে ২৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। মজুত আলু শেষ হয়ে যাওয়ার পর কৃষকদের কাছ থেকে চড়া দামে আলু কিনতে হয়েছে তাদের।
তারা বলছেন, এখন সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করতে গেলে কেজিতে ৮ থেকে ৯ টাকা লোকসান গুনতে হবে। তাই চাইলেও নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করতে পারছেন না তারা।