সময়ের প্রকৃতি আল্লাহর দান। বিষয়, বস্তু, ব্যক্তি ও স্থানের সঙ্গে সংযুক্ত করে সময়কে বিশেষ পরিচয়ে বিশেষায়িত বা সংজ্ঞায়িত করা হয়। ব্যবহারিক সুবিধার্থে চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহ, নক্ষত্র নানা প্রাকৃতিক, জাগতিক ও মহাজাগতিক বস্তুর সঙ্গে মিল রেখে সময়ের হিসাব বা ধারণা প্রকাশ করা হয়। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র হিসাবমতো চলে।’ (সুরা ৫৫ রহমান, আয়াত: ৫)
কালের স্রোতে সময় গড়িয়ে যায়; আয়ু ক্ষয় হয়, বয়স বৃদ্ধি হয়। সময়কে কাজে লাগানো বা সময়ের সদ্ব্যবহারই জীবনের সফলতা এবং সময়ের অপচয় বা অপব্যবহার জীবনের ব্যর্থতা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সময়ের শপথ! মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে; তবে তারা নয়—যারা বিশ্বাস করে, সৎকর্ম করে এবং সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১-৩)
সময় জীবনের মূলধন বা পুঁজি। সময় অমূল্য সম্পদ। একে কর্মের মাধ্যমে মূল্যবান ও মূল্যায়ন করতে হয়। আমলের পসরার মাধ্যমে একে লাভজনক করতে হবে। না হলে কালের আবর্তের নিপতিত ও নিমজ্জিত হতে হবে। তিলে তিলে হিসাব দিতে হবে প্রতিমুহূর্তের। দুনিয়ার স্বল্প সময়ের ক্ষুদ্র আমলও পরকালের অনন্ত সুখের কারণ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা–ও সে দেখতে পাবে; আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎ কর্ম করলে তা–ও সে দেখতে পাবে।’ (সুরা-৯৯ যিলযাল, আয়াত: ৭-৮)
সাধারণ সময়ও বান্দার ইখলাস ও তাকওয়াপূর্ণ সুন্নাহভিত্তিক নেক আমল ও ত্যাগ–তিতিক্ষা এবং শুভ উদ্যোগ ও সফল সার্থক অবদানের কারণে অসাধারণ পুণ্যময় হয়ে ওঠে। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনটি আমল কখনো পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হলো তাহাজ্জত নামাজ, প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিদ’–এর রোজা পালন ও রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ। (জামিউস সগির ও সহিহ বুখারি: ১৯৭৫)
নবীজি (সা.) প্রায়ই প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা পালন করতেন। কারণ, এই দুই দিন বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পৌঁছানো হয়। বিশেষত সোমবারে জন্মগ্রহণ ও ওহি প্রাপ্তির শুকরিয়াস্বরূপ তিনি এই আমল করতেন। (মুসলিম: ২৫৬৫, সিলসিলাতু আহাদিসিস সহিহা, নাসিরুদ্দীন আলবানী: ২৩৫৭)
আমল দ্বারা সময়কে ঋদ্ধ করা ও জীবনকে সমৃদ্ধ করা জ্ঞানীর কাজ। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের পূর্বে মূল্যায়ন করো—যৌবনকে বার্ধক্যের পূর্বে, সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের পূর্বে, অবসরকে ব্যস্ততার পূর্বে, জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে।’ (শুআবুল ইমান, বায়হাকি: ১০২৪৮, সিলসিলাতু আহাদিসিস সহিহা, নাসিরুদ্দীন আলবানী: ৩৩৫৫)
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী