পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নদীপথে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরা নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪১টি যাত্রীবাহী লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে গেছে। আর টার্মিনালে লঞ্চ এসেছে ৪৯টি।
লঞ্চমালিক কর্তৃপক্ষ বলছে, গুলিস্তান থেকে সদরঘাট এলাকা পর্যন্ত তীব্র যানজটের কারণে নৌপথের যাত্রীসংখ্যা কমে গেছে।
নদীপথের যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচল ও যাত্রী হয়রানি রোধে টার্মিনাল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। টার্মিনাল এলাকায় ঈদে ঘরমুখী নদীপথের যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পন্টুনে নোঙর করে রাখা লঞ্চের প্রবেশমুখে লঞ্চ কর্মচারীদের যাত্রী তোলার হাঁকডাক চলছে। অনেক যাত্রী লঞ্চে প্রবেশ করছেন। দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি রুটের যাত্রীরা লঞ্চ ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে লঞ্চের ডেকে মালামাল নিয়ে বসে আছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হুলারহাট, আমতলী, ভাসানচর ও ঝালকাঠি নৌরুটের যাত্রীরা।
এমভি কর্ণফুলী-১০ লঞ্চের যাত্রী আবুল হাসনাত বলেন, ‘ঈদ উদ্যাপন করতে পরিবার–পরিজন নিয়ে ভোলায় যাচ্ছি। আমাদের লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা সাতটার দিকে। যানজট এড়াতে বেলা দুইটার দিকে টার্মিনালে চলে আসি। এরপরও গুলিস্তান থেকে সদরঘাটে আসতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। সারা বছর সড়কে যানজট লেগে থাকে। অন্তত ঈদ মৌসুমে সড়ক ও টার্মিনাল এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’
অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের আহ্বায়ক মামুন অর রশীদ বলেন, আজ যাত্রী উপস্থিতি কম ছিল। টানা পাঁচ দিন সরকারি ছুটি থাকায় নৌপথে যাত্রীদের চাপ কম হবে। আগামীকাল বুধবার গার্মেন্টস ছুটি হলে যাত্রীদের চাপ বাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে পদ্মা সেতুর কারণে আমাদের তেমন সমস্যা হচ্ছে না। মূল সমস্যা হচ্ছে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট এলাকা পর্যন্ত যানজট। এই কারণে যাত্রীরা নদীপথে না গিয়ে সড়কপথে বাড়ি যাচ্ছেন। এতে আশানুরূপ যাত্রী না পেয়ে লঞ্চমালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যানজট নিরসনের ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখী নদীপথের যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা পরিদর্শনে আজ বিকেল চারটার দিকে সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় আসেন নৌ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম।
পরে সাংবাদিকদের শফিকুল ইসলাম বলেন, নদীপথে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও হয়রানি রোধে নৌ পুলিশ টার্মিনাল ও নদীপথে তৎপরতা জোরদার করেছে। টার্মিনাল এলাকায় অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম রোধে নৌ পুলিশ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। নৌ দুর্ঘটনা রোধে ১৭ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে মালবাহী জাহাজ, লাইটার ও বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কালবৈশাখী মৌসুমে আবহাওয়া পূর্বাভাস মেনে লঞ্চ চলাচল করবে। কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন করতে দেওয়া হবে না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নৌ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, নৌ পুলিশের ঢাকা অঞ্চলের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস, বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির ও অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের আহ্বায়ক মামুন অর রশীদ।