ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) চিকিৎসা কেন্দ্র ভাংচুর ও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের নবীন ছাত্রকে র্যাগিংয়ের ঘটনায় ছয় শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিন ছাত্রকে স্থায়ী ও অপর তিন জনকে এক বছরের সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হওয়া তিনজনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট ১৯৮৭-এর পার্ট-২ এর ধারা-৪ ও ৫ মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অপর তিনজনের অপরাধের মাত্রনুযায়ী এক বছরের জন্য ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শেলীনা নাসরীন।
নিয়ম অনুযায়ী, স্থায়ী বহিষ্কারের আগেই শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিষ্কার করে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির এই সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেটে সুপারিশ আকারে যাবে। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এসব নিয়ম না মেনে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দাবি করে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন অভিযুক্তদের সহপাঠীরা। তারা বিকেল ৪টায় প্রধান ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ করেন। এতে বিকেল ৪টায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গাড়ি ছেড়ে যেতে পারেনি। তাদের দাবি, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কারণ দর্শানো নোটিশ না দিয়েই বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রায় দুই ঘন্টা ফটক আটকে রাখার পর ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে তালা খুলে দেয় আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা তদন্ত প্রতিবেদনকে ভুয়া দাবি করে নতুন তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানায়৷
মেডিকেল ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য এবং র্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িত হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের হিশাম নাজির শুভ ও মিজানুর রহমান ইমনকে স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। র্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িত তিন ছাত্র শাহরিয়ার পুলক, শেখ সালাউদ্দীন সাকিব, সাদমান সাকিব আকিবকে এক বছরের সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা যায়, গত ১০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র ভাংচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রেজওয়ান সিদ্দীকি কাব্যের সংশ্লিষ্টতা মেলে। ফলে তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে ঘটনার সময় কাব্যের সাথে থাকা অপর দুই শিক্ষার্থী সালমান আজিজ, আতিক আরমানের সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি তদন্ত কমিটি। ফলে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। এদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের ঘটনার প্রমান মেলে তদন্ত প্রতিবেদনে। পরে কমিটির সুপারিশে দুই ছাত্রকে স্থায়ী ও অপর তিন ছাত্রকে এক বছরের বহিষ্কার করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর সাইফুল ইসলাম বলেন বলেন, আমার জানা মতে তদন্তকার্যে কোনো ধরনের অসঙ্গতি নেই৷ আমরা উভয়পক্ষের সাথে কথা বলে যাচাই-বাছাই করেই রিপোর্ট দিয়েছি। বাকি সিদ্ধান্ত শৃঙ্খলা কমিটি নিয়েছে।
ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, বারবার যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়গুলো যাতে নজির হয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে কেউ এমন ঘটনা না ঘটায়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মানবিক দিক বিবেচনা করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা করতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ।
প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, শিক্ষার্থীরা ভুল বুঝেছে। তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। আজকের সভায় তদন্ত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা ও সুপারিশ করা হয়েছে। এর আলোকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য চিঠি দেওয়া হবে। এছাড়া তাদেরকে সশরীরে ডাকাও হবে। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গনরুমে নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের নবীন ছাত্রকে র্যাগিং করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ র্যাগিয়ের ঘটনায় জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে ‘ক্যাম্পাসে র্যাগিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ’ উল্লেখ করে মাইকে প্রচার করে।