জ্বালানিসংকট কাটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির নীতি স্বল্প মেয়াদে কার্যকর হলেও দীর্ঘ মেয়াদে নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। এমনকি তা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপের সৃষ্টি করবে। ব্যয়বহুল এলএনজির পরিবর্তে সমুদ্র ও উপকূলের প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম বেগবান করতে হবে। জ্বালানিসংকট কাটাতে এটি সর্বোত্তম বিকল্প।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের (আইসিসিবি) ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে এমনটাই তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আইসিসিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে।
জ্বালানির সংকট কাটাতে ২০১৮ সাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু হয়। চলতি বছর বিশ্ববাজারে দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেট বা খোলাবাজার থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ রেখেছে সরকার। তাতে গ্যাস–সংকট আরও প্রকট হয়। বর্তমানে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের এটিও অন্যতম কারণ।
আইসিসিবি বলেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক জ্বালানিসংকটের একটি কারণ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধ না হলেও বাংলাদেশ জ্বালানিসংকটের মুখোমুখি হতো। ২০১৫ সাল থেকে স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন ও সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। অদূর ভবিষ্যতেও সেটি অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে ভূবৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যতটুকু গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস অনাবিষ্কৃত থেকে গেছে।
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে ও পেট্রোবাংলার যৌথ সমীক্ষায় (২০০১) দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ৩২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট অনাবিষ্কৃত প্রাকৃতিক গ্যাস–সম্পদ আছে। একই সময়ে নরওয়ের পেট্রোলিয়াম ডিরেক্টরেট ও হাইড্রোকার্বন ইউনিটের আরেকটি যৌথ গবেষণায় বলা হয়, অনাবিষ্কৃত গ্যাস–সম্পদের গড় পরিমাণ ৪২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ বছরে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করে। অর্থাৎ অব্যবহৃত গ্যাস–সম্পদ অনুসন্ধানের মাধ্যমে ৩০ বছরের জন্য জ্বালানি নিশ্চিত করা সম্ভব।
আইসিসিবি বলেছে, গ্যাস খাতে বাংলাদেশের আরও সম্ভাবনা থাকলেও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনুসন্ধান কূপের সংখ্যা কম। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১০০টি অনুসন্ধানমূলক কূপ খনন করা হয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আয়তন মাত্র ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার হলেও তারা ১৫০টির বেশি অনুসন্ধানী কূপ খনন করেছে। এই পরিসংখ্যানই বলছে, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানের হার আসলে কতটা কম।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হবে। তখন আন্তর্জাতিক অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকবে না। এ ছাড়া ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্গে আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে যখন বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের প্রক্রিয়া শুরু হবে, তখন কঠিন চাপে পড়ার শঙ্কা আছে বলে মনে করে আইসিসিবি।