জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘সাড়ে ১৫ বছরে জমানো জঞ্জাল রাতারাতি শৃঙ্খলায় আনা সম্ভব নয়। সেজন্য তাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) সময় দিতে হবে। তাদের এজন্য বেগও পেতে হচ্ছে। তারা চেষ্টা করছেন কিন্তু জনগণের প্রত্যাশা তো অনেক বেশি। আমরাও হয়ত একটু বেশি প্রত্যাশা রাখি। তবে সার্বিকভাবে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার পক্ষে আমরা।’
সোমবার রাতে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জামায়াত আমির।
তিনি বলেন, ‘ডালে ডালে যদি প্যাঁচা বসে থাকে তাহলে ময়না পাখি বসার জায়গা কোথায়? সেই প্যাঁচা সরানোর সুযোগ তো দিতে হবে। পতিত আওয়ামী লীগের দোসর, ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী দলকানা কর্মকর্তাদের সরানো না গেলে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে জনগণ।’
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে গত ৫ আগস্ট। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের তিন দিনের মাথায় দায়িত্ব নেয় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আজ দুই মাস পূর্ণ হয়েছে ইউনূস সরকারের। দুই মাসে নানান কাজে অসংগতির কারণে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে ড. ইউনূসের সরকারকে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চাওয়া-পাওয়া ও প্রত্যাশার ডুলি খুলে বসেছে। অনেকে রাতারাতি অনেক কিছুরই হিসাব মেলাতে চাইছেন।
তবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের দুই মাস পূর্তিতে জামায়াত আমির প্রতিক্রিয়া জানান সাবধানী ও কৌশলী হয়ে। তাতে সরকারকে যেমন সমর্থন করেছেন তেমনি জনগণের প্রত্যাশা ও চাপ বৃদ্ধির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সরকারকে।
জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘মানুষ শতভাগ পারফেক্ট নয়। আমিও না, আপনিও না। মানুষ মাত্রই ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। এটা পার্সোনালি থাকে, কালেক্টিভলি থাকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের সক্ষমতা ও আন্তরিকতার জায়গা থেকে শতভাগ চেষ্টা করছেন বলেই আমরা আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছরের জমানো জঞ্জাল তো, এগুলো শৃঙ্খলায় আনতে তাদের সময় দিতে হবে। তাদেরও বেগ পেতে হচ্ছে। তারা তো তাদের মতো করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। আমরাও হয়ত একটু বেশি প্রত্যাশা রাখি। কিন্তু জনগণের সব প্রত্যাশা একটা নির্বাচিত সরকারও পূরণ করতে পারে না। সেটা ফেয়ার গর্ভমেন্ট হলেও। তবে আনফেয়ার হলে তো কথাই নেই।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এদিক থেকে আমরা তাদের জন্য বলেছি যৌক্তিক সময়ের বিষয়ে। কী কাজ করতে হবে তা তো বুঝে উঠবে, যাকে দিয়ে কাজ করাবেন তাকে তো সেটা বুঝে ওঠার সময় দিতে হবে। সেই সময়টা হয়ত তার নিচ্ছেন। কিন্তু সেটা দেরি হয়ে যাক তা আমরা চাই না। আমরা চাই তারা ফুল সুইংয়ে তাদের কাজটা করুক।’
সরকারের সফলতা ব্যর্থতার সার্বিক মূল্যায়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সফলতা বা ব্যর্থতার বিষয়টি আসলে মোটা দাগে বলা যায় না। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থতা বলার সময় এখনো আসেনি।’
সার্বিক সংস্কার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে অবশ্যই পরামর্শ দিয়েছি। আমরা তো আশা রাখি সরকার সেগুলো আমলে নিয়ে কাজ করবে। শুধু জামায়াতে ইসলামীই নয়, সব দলই পরামর্শ দিয়েছে। বিএনপি তো ওপেনলি কথা বলেছে। এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই, অন্তত স্বৈরাচারে যারা সহযোগী ছিলেন মানুষের উপর জুলুম অত্যাচারের অংশীদার ছিলেন, মানুষের সম্পদ, আমানত যারা নষ্ট করেছেন, বেহাত করেছেন, নিজেরা নিজেদের সম্পদকে কপাল বানিয়েছেন দুর্নীতির মাধ্যমে। নৈতিকভাবে তারা সার্ভিসে থাকার অধিকার নিজেরাই হারিয়ে ফেলেছেন। সে রকম জায়গায় অবশ্যই হাত দিতে হবে। হাত না দিলে কেমনে হবে? এতে কে খ্যাপল আর কে খ্যাপল না এটা তো বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে দেশ ও জাতির স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই মাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে জামায়াত আমির বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় যে কোনো অবনতি হচ্ছে সে রকম কিছু ঘটেনি। এখন যা আছে আগেও তারচেয়ে ভালো ছিল তাও আমি বা আপনি কেউ বলতে পারব না। আগে ভালো হয়নি বলে যে এখন ভালো হবে না এমন কোনো কথা নয়। আবার আগেরটাই যদি থেকে যায় তাহলে চেঞ্জটা কেন হলো? আমরা আসলে ভালোটা আশা করি, আরও ভালোটাই তো আমরা দেখতে চাই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে।’